বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘তলোয়ারের মাধ্যমে নয় বরং শ্রেষ্ঠত্ব ও আদর্শের মাধ্যমে ইসলাম বিজয়ী হয়েছে; তাই আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও আদর্শ দিয়েই বৈষম্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত রুকন সম্মেলন-২০২৪-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিজয়ের মাধ্যমে জাতি নতুন করে আলোর মুখ দেখেছে। স্বৈরাচারি ও ফ্যাসিবাদী শাসনের সাড়ে পনের বছর দেশের চিহ্নিত কিছু লোক ছাড়া প্রায় ১৮ কোটি মানুষই মজলুম ছিলেন।
তারা জামায়াতে ইসলামীকে বিশেষভাবে টার্গেট করেছিলেন।
ফ্যাসিবাদীরা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগী-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর পৈশাচিক নৃত্য করেছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের নেত্রীর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মামলা দায়ের করা হলেও ইতিহাস চুরি করে ক্ষমতার দাপটে তার নামের মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু দিন বদলেছে।
আল্লাহ চাইলে তার বিরুদ্ধে আবার মামলা সচল হবে।
তার বিরুদ্ধে মজলুমরা বিচার চাইতেই পারেন।’ এ সময় অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের পাতানো ও সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দল ক্ষমতায় এসে দেশে নতুন করে বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল।
তারা এমনই এক অপশক্তি যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক শাক্তিকে নিষিদ্ধ করাসহ নিজেদের দলকেও নিষিদ্ধ করেছিল। তারা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর দাপটের সাথে দেশ শাসন করে দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছিল। তারা চৌকস ও দেশপ্রেমী ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে দেশের সীমান্ত ও প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করে দিয়েছিল। সেনাবাহিনী নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ঘটনার একটি তদন্ত করলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
তারা নিজেরা তদন্ত করলেও সে তদন্তের ফলাফলও জনগণকে জানানো হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের অতন্ত্র প্রহরী হওয়ার কারণেই জামায়াতকে বিশেষভাবে টার্গেট করে জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে দেশ পরিণত করা হয় বধ্যভূমিতে। কিন্তু আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে সে অবস্থার অবসান হয়েছে। তাই এই বিজয়কে অর্থবহ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
আমিরে জামায়াত বলেন, ‘মূলত প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য জামায়াতকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছিল।
কথিত বিচারের নামে শীর্ষনেতাদের হত্যাসহ ৫শ নেতাকর্মীকে বিচারবর্হিভূতভাবে হত্যা করা হয়। এ জন্য গণমাধ্যমকেও ব্যবহার করা হয়েছে। শাহবাগে বেআইনী জমায়েত করে দেশে সৃষ্টি করা হয়েছিল এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। তথাকথিত একজন আলেমও সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন জ্ঞানপাপী। মূলত, পতিত সরকার ছিল গণহত্যাকারী সরকার।
তারা ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে নির্বিচারে অসংখ্য আলেম হত্যা করেছিল। যা ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানীতে তাদের পতন হয়েছে। তারা অতিমাত্রায় অহংকারী হয়ে উঠেছিল।’
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সম্মেলনে দারসুল কুরআন পেশ করেন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের পিতা গোলাম রাজ্জাক।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংগঠনের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন।
সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা.ফখরুদ্দীন মানিক, মহানগরী উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান ও পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ প্রমূখ। উদ্বোধনী সেশনে ছাত্র জনতার আন্দোলনে চোখ ও পা হারানো ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।