পাহাড়ের প্রেম বড়ই অদ্ভত। একবার যে এই প্রেমে পড়ে, তার আর মুক্তি নেই। পাহাড়ের নিরবতা, মেঘের আলিঙ্গন আর নীল আকাশের ছোঁয়ায় জীবন যেন এক নতুন অর্থ খুঁজে পায়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য জেলা বান্দরবান—দেশের প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক স্বপ্নের নাম। বান্দরবান মানেই শ’খানেক পর্যটনস্থল। তবে তার মধ্যেও এক অপার মোহময়তার নাম নীলাচল। শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্র যেন মেঘ, পাহাড় আর শূন্যতার এক নিঃশব্দ মিলনমেলা। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে উপরে উঠতেই চোখের সামনে খুলে যায় স্বর্গীয় এক দৃশ্যপট। মেঘ যেন হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলা যায়। নীলাচলে পা রাখলেই প্রথম যে দৃশ্য চোখে পড়ে, তা হলো—সীমাহীন দিগন্তজোড়া আকাশ আর ভেসে বেড়ানো মেঘের ছায়া। সকালের সূর্যোদয়, দুপুরে মেঘের খেলা আর বিকেলে লালচে-কমলা আভায় রাঙা আকাশ—প্রতিটি মুহূর্তই একেকটি চিত্রপট যেন। মাঝেমধ্যে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় চারদিক। কিন্তু হঠাৎই পরিষ্কার আকাশ থেকে দেখা মেলে বান্দরবান শহরের ছোট ছোট ঘরবাড়ি, বৌদ্ধ মন্দির, হোটেল আর ঘন সবুজ পাহাড়ের স্তর বিন্যাস। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, পর্যটকদের মন কাড়ে নীলাচলের ব্যবস্থাপনাও। রয়েছে বসার জায়গা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, খাবারের দোকান, এমনকি থাকার জন্য ছোট ছোট কটেজও। পরিবার, বন্ধু কিংবা একান্তে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য জায়গাটি একেবারে উপযুক্ত। স্থানীয় সিএনজি চালক হাসান বললেন, “সকালের সূর্যোদয় আর বিকেলের সূর্যাস্তের সময়টা সবচেয়ে সুন্দর। এখানে কয়েক ঘণ্টা চুপচাপ বসে থাকলেই জীবনের অর্ধেক ক্লান্তি ভুলে যাওয়া যায়।” নীলাচল যাওয়ার পথটাও বেশ সহজ। ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে সেখানকার নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে বান্দরবানগামী বাসে চেপে বসা যায়। চাইলে সরাসরি ঢাকা থেকে বান্দরবানের বাসেও যাওয়া যায়। বান্দরবান শহর থেকে সিএনজি কিংবা জনপ্রিয় ‘চাঁদের গাড়ি’ ভাড়া করেই সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় নীলাচলে। ভ্রমণের আদর্শ সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ। এ সময়টায় আকাশ পরিষ্কার থাকে, দেখা মেলে মেঘের খেলা আর রোদের ছায়াপথ। শহরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ভুলে, নীল মেঘের গায়ে হেলান দিয়ে প্রকৃতির নিঃশব্দ ভাষা অনুভব করতে হলে একবার হলেও যেতে হবে নীলাচলে। কারণ, সৌন্দর্য শুধু চোখে দেখার নয়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করারও। আমারবাঙলা/এফএইচ
Join Telegram
Tags:
Amarbangla Feed