ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলা, নিহত ২০

ভারতনিয়ন্ত্রিত
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসির। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকালে কাশ্মীরের পেহেলগামে এ হামলা হয়। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত মনোরম শহর পেহেলগামকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। জনপ্রিয় এই পর্যটন নগরীতে মঙ্গলবারের এই হামলা ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে যতগুলো হামলা হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় এটি অনেক বড় হামলা। হামলায় আরো অনেকে আহত হয়েছেন, যাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভারতের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক। একজন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আরেকজন নেপালের নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ভারতের নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা রয়েছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের সংকল্প অটুট রয়েছে এবং এটি আরো শক্তিশালী হবে।’ এই হামলার পর নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার রাতেই দেশে ফিরছেন বলে পিটিআই জানিয়েছে। হামলার পর কাশ্মীরে গেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কাশ্মীরের শ্রীনগরে গিয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। হামলার পর ঘটনাস্থল পেহেলগাম এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে ওই অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা এই ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিষয়টি রয়টার্সের পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। হামলার নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘কাশ্মীরের খবরে গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলিষ্ঠভাবে ভারতের পাশে রয়েছে।’ কাশ্মীরে এই হামলা হয়েছে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে। হামলার পর জেডি ভ্যান্স এক্স এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ভারতের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ভুক্তভোগীদের প্রতি উষা ও আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। গত কয়েক দিন আমরা এই দেশের সৌন্দর্য ও এর জনগণের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। এই হামলায় শোকার্ত মানুষের প্রতি আমাদের প্রার্থনা রইল।’ হামলার ঘটনাটি ঘটেছে বৈসারন নামক এলাকায়। এটি পেহেলগাম থেকে প্রায় তিন মাইল (পাঁচ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিদর্শক ভিডি কুমার বিরদী বিবিসি হিন্দিকে জানান, যেখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো গাড়ি যেতে পারে না। যে পর্যটক দলের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়, সেই দলে ছিলেন গুজরাট থেকে আসা একজন। তিনি বলেছেন, হঠাৎ হামলা শুরু হলে মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সবাই দৌড়াতে শুরু করেন এবং কান্না-চিৎকার করতে থাকেন। ভারতের বিভিন্ন সংবামাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতীয় সেনারা ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মাটিতে অনেকের দেহ পড়ে আছে এবং লোকজন কান্না করছে ও সাহায্য চাইছে। অবশ্য বিবিসি এসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অনেক পর্যটককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরো এলাকা সেনাসদস্যরা ঘিরে রেখেছেন এবং চৌকিগুলোতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে আরেকটি অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। কাশ্মীরে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৯০–এর দশক থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতায় বহু সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানি হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার পর হিমালয়ের এ অঞ্চল বিভক্ত হয়। পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে। এ নিয়ে দেশ দুটি বিগত কয়েক দশকে দুটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ও একটি সীমিত সংঘাতে জড়িয়েছে। বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনাসদস্য স্থায়ীভাবে কাশ্মীরে মোতায়েন রয়েছেন। ২০১৯ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করেন। কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা হয় ২০২৪ সালের জুনে। সে সময় হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বাসে বন্দুকধারীরা গুলি চালালে নয় জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হন। এর আগে ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৪৬ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। ভারত এই হামলার জেরে পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালায়। আমারবাঙলা/এমআরইউ

Join Telegram

Post a Comment

Previous Post Next Post